Post

আজ সারা বাংলাদেশে 2023 সালের Secondary School Certificate (S.S.C) পরীক্ষা।১৩ বছর আগে এমন একটি দিনে আমি S.S.C পরীক্ষার্থী ছিলাম।এই তো সেদিন সাইকেলে করে পরীক্ষা দিয়ে আসলাম।কেমন করে যে দেখতে দেখতে ১৩ বছর হলো বুঝতেই পারলামনা। খুব হাসি পায় পরীক্ষার প্রথম দিনের কথা মনে হলে,২০১০ সাল তখন আমি সাইজে ছিলাম XS টাইপের।লম্বায় ৪’৮˝ এবং যেদিন প্রথম বাংলা পরীক্ষা সেদিন সকলে আগেভাগেই গিয়েছিলাম পরীক্ষা কেন্দ্রে,কারন সকলের উদ্বেগ ছিলো সিট নম্বর খুঁজে বের করার।যথারীতি আমিও ছিলাম বন্ধুদের দলে।পরীক্ষা কেন্দ্রের গেট খুলার সাথে সাথে বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষার্থী-পরীক্ষার্থিনীরা হুরমুর করে প্রবেশ করতে লাগলো কলেজ ক্যাম্পাসে।উল্লেখ্য যে তখন আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র সংঘটিত হয়েছিলো কলেজে।সকলের সাথে আমিও প্রবেশ করছিলাম,হঠাৎ দেখি কেউ একজন আমাকে টেনে ধরলো।আমি থেমে গেলাম ভীড়ের মাঝে।সকলে ইতিমধ্যে প্রবেশ করেছে কেন্দ্রে।আমাকে বলা হলো তুমি কোথায় যাও,আমি আমার প্রবেশপত্র দেখিয়ে সবিনয়পূর্বক বললাম আমি এবারের পরীক্ষার্থী।তারা আমার প্রবেশপত্র পরখ করে অনেকটা অবাক এবং বিষ্মিত হলো বোধহয়।তারপর হাসিমুখে বললো তুমি এতো ছোট তবুও পরীক্ষার্থী?আমি সাইলেন্টলি মাথা নাড়ালাম।তারপর তারা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন যাও বাবা! পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০ টায়,পৌনে ১০ এলার্ম বাজালো সেন্টার কর্তৃপক্ষ,সেই এলার্মের সাথে সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে টহলরত পুলিশরা Examine এবং পাহারারত শিক্ষক ব্যতীত সকলকে কেন্দ্রের বাইরে পাঠাতে ব্যস্ত।হঠাৎ আমাকে একজন পুলিশ ধমক দিলেন এই ব্যাটা বাইরে যা!আমি তখন জলবিয়োগ করে আমার পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করছিলাম।আমি পূর্বের ন্যায়ত পুলিশদের জানালাম আমি পরীক্ষার্থী।তারা আমার খর্বকায় সাইজের কারনে কৌতুহলবশত দেখতে চাইলো আমার এক্সাম এডমিট পেপার।আমি প্রবেশপত্র দেখাতেই সেখানকার পুলিশরা অন্য সকল পুলিশকে ডেকে হাসিমুখে বলতে লাগলেন দেখেন দেখেন এই বাবুটি এবার S.S.C দিবে।সেবার প্রথমবার দেখেছিলাম কোন পুলিশকে হাসতে।তারপর তারাও আমাকে দোয়া দিলেন। পরীক্ষা শুরু হলো,আমি খুব সাবধানে আমার খাতায় রোল নম্বর,রেজিস্ট্রেশন নম্বর,বোর্ডের নাম,সাবজেক্ট কোড বসালাম এবং Question পেপার পাওয়ার পর একনজর চোঁখ বুলালাম কি অবস্থা।সেবার প্রথম চালু হয়েছিলো সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা।দেখলাম মোটামুটি কমন।শুরু করলাম উরাধুরা লেখা।হঠাৎ একজন টাই কোর্ট পরিহিত চান্দিচুলা প্রবেশ করলেন কক্ষে এবং আমার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে আমাদের রুমের পরীক্ষককে বললেন ওর খাতাটি নিয়ে আসেন।আমি তো অবাক শালা বলে কি!পরীক্ষক আসছেন এগিয়ে,আমার গলা ক্রমাগত শুকাচ্ছিলো তারপর দেখলাম আমার পরের সিটের আমারই সহপাঠীর খাতাটি নিয়ে নিলেন।তার অপরাধ সে টেবিলের নিচে তাকিয়ে পা দিয়ে বেঞ্চ সুবিধামতো টেনে নিচ্ছিলো।আমার খুব খারাপ লাগছিলো বন্ধুটির জন্য।সে তো হতাশ এবং তার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলোনা।অবশেষে ২০ মিনিট পর তাকে খাতা দিয়েছিলো। আমি পুরো পরীক্ষাকেন্দ্রে সবচেয়ে পিচ্চি ছিলাম,সকল পরীক্ষক আমাকে খুব আদর করেছিলো তখন।আমি ডান-বামে তাকালে কিছু বলতোনা।একদিন এক পরীক্ষক আমাকে হাসতে হাসতে বললেন দোস্ত তোমার জন্য সাত খুন মাফ,শুধু ম্যাজিস্ট্রেট আসলে সাবধান হবে।আমি অনেক খুশি,শিক্ষক আমায় দোস্ত বলছেন।সেবার খুব সুন্দরভাবে সাফল্যলাভ করেছিলাম।তারপর H.S.C.তারপর ঢাকা এসে চাকুরির পাশাপাশি গ্রাজুয়েশন করতে ভর্তি হলাম ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ গাজীপুরে।এভাবেই দেখতে দেখতে কখন যে ৯ বছর কেটে গলো বুঝতেই পারলাম না। যাই হোক এবারের সকল S.S.C পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থিনী ছোট ভাই-বোনদের জন্য শুভ কামনা এবং আন্তরিক মোবারকবাদ।সবাই ভালো ফল অর্জন করে নিয়ে আসুক কাঙ্খীত সফলতা।পরিবারের মুখে ফোটাক হাসির তাজা হাসনাহেণা।==== সমাপ্ত====রচনাকালঃ ১ লা ফেব্রুয়ারি ২০২৩.————-মোঃ সারোয়ার হোসেন।mdsarwarhossen@muminmusolman.comwww.muminmusolman.comPhoto: 14-04-2015